প্লাস্টার_কেন_করা_হয় ?
প্লাস্টার_কেন_করা_হয় ?

ইট বা আর.সি.সি সারফেসের অমসৃন পৃষ্ঠকে মসৃন ও সৌর্ন্দয বর্ধনের জন্য।
পেইন্টিং এর জন্য উত্তম সারফেস প্রদানের জন্য।
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।
সর্বপরি অসমতল বা উঁচু নিচু পৃষ্ঠকে সমতল করে নির্মান কাজের ত্রুটি ঢেকে দেওয়ার জন্য প্লাস্টার করা হয়।

প্লাস্টারের কাজে ব্যবহৃত উপকরণের উপর ভিত্তি করে প্লাস্টারকে নিন্মোক্ত কয়েক ভাগে বিভক্ত করা যায়,

I. সিমেন্ট প্লাস্টারঃ সিমেন্ট+বালি+পানি।
II. লাইম প্লাস্টারঃ চুন+বালি+পানি।
III. সূরকি প্লাস্টারঃ চুন+সুরকি+পানি।
IV. লাইম সুরকি প্লাস্টারঃ চুন+সুরকি+বালি+পানি।
V. মোজাইক প্লাস্টারঃ স্টোন চিপস+সিমেন্ট+ পানি।
এছাড়াও বর্তমানে Premix/ Ready mix টাইপের কিছু প্লাস্টার পাওয়া যায়, যা সাধারন প্লাস্টারের চাইতে অধিক টেকসই, মজবুত ও শক্তিশালী।



• দরজার ফ্রেম বা চৌকাঠ কে এমনভাবে সেট করতে হবে যেন তা প্লাস্টারের সাথে মিলে যায় অর্থ্যাৎ প্লাস্টার এবং চৌকাঠ একই লেভেলে বা ফ্ল্যাশে থাকে। সুতরাং চৌকাঠ বসানোর সময়েই এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।
• চৌকাঠ ও প্লাস্টার সব সময় যে একই লেভেলে থাকতে হবে এমন কথা নেই, চৌকাঠের প্রস্থ বেশি হলে তা অপসেট আকারেও বর্ধিত থাকতে পারে।

প্লাস্টারিং শুরুর পূর্বে পাইপ ওয়্যারিং এর কাজ শেষ করে নিতে হবে, যেমন ইলেকট্রিক, প্লাম্বিং, গ্যাস লাইন ইত্যাদি। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ইলেকট্রিক এর MK Box/ SDB বক্সগুলো এমন ভাবে সেটিং করতে হবে যেন তা প্লাস্টারের সারফেসের সাথে মিলে যায়। কিছুটা ভিতরে থাকুক সমস্যা নেই, কিন্তু তা সারফেস থেকে অফসেট হয়ে থাকলে দেখতে খুবই বিশ্রি লাগবে।

RCC সারফেসের সাথে প্লাস্টারের উত্তম বন্ডিং সৃষ্টির জন্য চিপিং এর বিকল্প নেই, চিপিং এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ইহা যেন ৩/৪” থেকে ১” এর মধ্যে থাকে এবং ১ থেকে ২ মিলি গভীর হয়। সবসময় চেষ্টা করবেন কাজ শুরুর পূর্বেই চিপিং সেরে ফেলতে কারণ প্লাস্টারের সময় চিপিং করা সম্ভব হয়না,

1. এই কাজের জন্য রাজ মিস্ত্রিগন প্রোফেশনাল নন।
2. তাদের নিকট সেই ধরনের যন্ত্রপাতিও [বাসুলা] থাকেনা, তারা ধার বিহীন [ভোঁতা] বাসুলা দিয়েই কোন রকম কাজ সেরে ফেলতে চায়।

• প্লাস্টারের আগের দিন ব্রিক ওয়াল বা আর.সি.সি সারফেস কে এমনভাবে ভিজাতে হবে যেন তা সিমেন্ট মসলা থেকে সাথে সাথেই পানি শোষন করতে না পারে, একইভাবে অত্যাধিক ভিজার কারণে যেন পড়ে না যায়। কম ভিজালে কাজ করতে যেমন অসুবিধে হবে, তেমনি বেশি আদ্র থাকলেও মিস্ত্রিরা ড্রাই মর্টার ইউজ করতে চাইবে, তবে কথা একটাই ভিজানোর বিকল্প নেই যদি কাজের কোয়ালিটি ভাল চান।
• বাহিরের কিংবা ভিতরের দেওয়ালে শ্যাওলা বা লুজ ময়লা থাকলে তা প্লাস্টারের পূর্বে তারের ব্রাশ/ওয়্যার ব্রাশ/ সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

• আমরা জানি বালিতে সাধারনত বিভিন্ন ধরনের অপদ্রব্য মিশ্রিত থাকে, যেমন মাটি, কয়লা, কাঠ, পাতা, ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি। তাই কাজ শুরুর পূর্বে অবশ্যই অবশ্যই বালিকে চেলে নিতে হবে।
• সাদা বালি অবশ্যই (এফ এম ১.৩ থেকে ১.৭) এর হতে হবে।
• বালি প্রোপারলি চালা না হলে প্লাস্টারের পরে গাত্রে কাঠ, কয়লা বা কালো দানাগুলো ভেসে উঠবে, যা রং এর জন্য খুবই ক্ষতিকর।

• কাজের পূর্বে বালিকে ধুয়ে নেওয়া উত্তম এতে করে বালিতে মিশ্রিত লবনের সহিত হালকা ওজনের অপদ্রব্যগুলোও দূর হয়ে যাবে, বালি ধোয়ার মাধ্যমে ইহা অনেকটা রোধ করা সম্ভব।
• আবহাওয়ার [লবনের] ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্লাস্টারকে রক্ষা করার জন্য বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল পাওয়া যায়।
#বালি সিমেন্ট মিশ্রণের অনুপাত ও নিয়মঃ
আর.সি.সি. পৃষ্ঠতলে সিমেন্ট:বালি অনুপাত হচ্ছে ১ঃ৪ এবং ইটের পৃষ্ঠতলে ১:৬।
তবে মালিক পক্ষকে বাঁচাতে চাইলে ১:৫ এ করতে পারেন।
**এখন জেনে নেওয়া যাক বালি ও সিমেন্ট মিশ্রণের নিয়মাবলী:
১। বালু ও সিমেন্টের গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্লাস্টারের বালু ভালো করে চালতে হবে যাতে কোন রকমের ময়লা বালুর সাথে না থাকে। এরপর উপরোক্ত অনুপাতে বালু ও সিমেন্ট মিশিয়ে নিতে হবে।
২। বালু ও সিমেন্ট শুকনা অবস্থায় এমনভাবে মিশাতে হবে যেন মশলা দেখতে অভিন্ন লাগে বা ছাই রঙ এর মত মনে হয়। তারপর পরিমিত পানি দিয়ে পুনরায় ভালো করে কোদাল দ্বারা কেটে মিশাতে হবে। মনে রাখতে হবে বানানো মশলা ১ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
প্লাস্টার করার পদ্ধতিঃ
১। প্লাস্টার শুরু করার পূর্বে প্রথম কাজ হচ্ছে পৃষ্ঠতল প্রস্তুতকরণ
আর.সি.সি. পৃষ্ঠতলঃ
• ভালো করে চিপিং করতে হবে। চিপিং হচ্ছে হাতুড়ির সরু পাশ দিয়ে দেয়ালে খোদাইকরণ।
• অবাঞ্ছিত কোন ময়লা থাকলে তুলে ফেলতে হবে।
• পানি দিয়ে পৃষ্ঠতল ধুয়ে ফেলতে হবে। শুকনা পৃষ্ঠতলে প্লাস্টার করলে তা ফেটে যাবে।
ব্রিক পৃষ্ঠতলঃ
• ইটের গাঁথুনির পৃষ্ঠতল আগের মতই পরিষ্কার করতে হবে।
• শ্যাওলা বা লবণ থাকলে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
• ইটের গাঁথুনির জয়েন্টগুলি পরিষ্কার করতে হবে।
• দেয়ালের পৃষ্ঠতলে জেগে থাকা ইটের অংশ ভালোভাবে কেটে ছেঁটে দেয়াল মোটামুটি সমতলে আনার পর প্লাস্টার লাগানোর উপযুক্ত করা হয়।
২। প্লাস্টার করার পূর্বে আর. সি. সি. এবং ইট উভয় পৃষ্ঠতলই ভাল করে পানি দিয়ে ভিজাতে হবে।
৩। প্লাস্টার করার পূর্বে সিমেন্ট বালির মিশ্রণ দিয়ে ৩”X৩” @ ৫’ থেকে ৬’ পর পর পায়া করতে হবে।
৪। প্রয়োজন হলে পুরুত্ব কমানোর জন্যে পায়া করার সময় দুই/এক জায়গায় ছেঁটে নিতে হবে।
৫। আর. সি. সি. পৃষ্ঠতলে গ্রাউটিং (পানিতে শুধু সিমেন্টের মিশ্রণ) ব্যবহার করতে হবে।
৬। ভালো প্লাস্টার করতে হলে অবশ্যই পুরুত্ব ঠিক রাখতে হবে।
৭। কোন কারণে প্লাস্টারের পুরুত্ব বেড়ে গেলে সেই স্থানে অবশ্যই ডাবল প্লাস্টার সিস্টেম এ প্লাস্টার করতে হবে।
অর্থাৎ প্লাস্টারের পুরুত্ব ১.৫” হলে প্রথমবার ১” করে উলম্ব ও অনুভূমিক বরাবর লেভেল ঠিক করে প্লাস্টার করে রাখতে হবে এবং পরের দিন হাফ ইঞ্চি প্লাস্টার করে ফিনিশিং দিতে হবে।
৮। কোন অবস্থাতেই ভিজা প্লাস্টারের উপর শুকনা সিমেন্ট বালির মিশ্রণ লেপ্টে দিয়ে প্লাস্টার করা যাবে না। মিস্ত্রিদের ভাষায় একে “ভুরা” বলে।
৯। অ্যালুমিনিয়াম পাট্টা ও স্প্রিট লেভেলের সাহায্যে প্লাস্টার এর উলম্ব ও অনুভূমিক পৃষ্ঠতল চেক করতে হবে। প্লাস্টারের কোন সমস্যা থাকলে সাথে সাথে ঠিক করতে হবে।
১০। চৌকাঠের চারিদিকে, টাইলসের স্কাটিং এর উপরে এবং এসডিবি বক্সের চারিদিকে ৫মিমি প্রস্থ ৬ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে। সানশেড, ড্রপওয়াল এবং ক্যান্টিলেবার অংশে ১০ থেকে ১২ মিমি প্রস্থ এবং ১০ মিমি পুরুত্বে গ্রুভ করতে হবে।
১১। সাধারণত স্কাটিং এর জায়গা বাদ দিয়ে প্লাস্টারের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। পরে টাইলস বসিয়ে প্লাস্টার ফিনিশিং দেওয়া হয়।
১২। প্লাস্টার করার পর মনে রাখার জন্যে প্লাস্টার এর গায়ে তারিখ লিখে রাখা যেতে পারে।
১৩। প্লাস্টার করার ২৪ ঘন্টা পর হতে কমপক্ষে ৭ দিন, দিনে ৩-৪ বার করে কিউরিং করতে হবে।
ফিল্ডে প্লাস্টার চেক:
১। প্লাস্টারের উপর যদি হাত দিয়ে হাতুড়ির বাড়ি মারা হয় তবে গর্ত হয়ে গেলে সে প্লাস্টার পালটিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।
২। কলাম, বিম, স্লাব এবং স্লাব ও বিমের মিলিত জায়গায় প্লাস্টার স্ট্রেট আছে কিনা চেক করতে হবে।
৩। প্লাস্টারে ক্রাক আসলে তা ফেলে দিয়ে প্রয়োজনে ওয়্যার মেশ দিয়ে আবার প্লাস্টার করতে হবে।
৪। প্লাস্টারের মসৃণতল পরীক্ষার জন্যে দেয়ালের প্রান্ত দেশে বাতি ধরলে অসমান প্লাস্টারের ছায়া দেখা যাবে।
৫। কাঠের দরজা জানালার চৌকাঠের উপর প্লাস্টার চড়ানো যাবে না।
৬। নখ ফুটালে বালি বেড়িয়ে আসলে কিউরিং কম হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
প্লাস্টারের সমস্যা ও সমাধান:
১। প্লাস্টার ঝড়ে পড়া:
কারণ:
• মিক্সার ভালো না হলে ঝড়ে পড়তে পারে।
• ভেজা প্লাস্টারের উপরে শুকনা বালি সিমেন্টের মিশ্রণ ব্যবহার করলে প্লাস্টার ঝড়ে পড়তে পারে।
• বালুতে কয়লার গুঁড়া থাকলে ঝড়ে পড়তে পারে।
সমাধান:
খারাপ প্লাস্টার ফেলে দিয়ে নতুন করে উক্ত স্থানে প্লাস্টার করতে হবে।
২। প্লাস্টার ক্রাক করলে:
কারণ:
• আর সি সি ও ব্রিক জয়েন্টে প্লাস্টার ক্র্যাক হতে পারে। কাজ করার সময় উক্ত স্থানে ভালোভাবে মশলা ঢুকাতে হবে।
• প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ক্র্যাক দেখা দিতে পারে। প্লাস্টারের পুরুত্ব বেশি হলে ডাবল প্লাস্টার সিস্টেমে প্লাস্টার করতে হবে।
সমাধান:
ক্রাককৃত প্লাস্টার ফেলে দিয়ে এক্সপান্ডেড মেটাল বসিয়ে পুনরায় প্লাস্টার করতে হবে।