মেডিকেলে উচ্চশিক্ষা
বাংলাদেশে এমবিবিএস (MBBS) সম্পন্ন করার পর আরও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। সাধারণত, যারা মেডিকেল ফিল্ডে আরও গভীর জ্ঞান এবং বিশেষজ্ঞ হতে চান, তারা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট বা মাস্টার্স পর্যায়ের ডিগ্রি অর্জন করে। বাংলাদেশে এমবিবিএস-এর পর সাধারণত নীচের ধরণের পড়াশোনার সুযোগগুলি রয়েছে:
১. পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (Diploma Courses):
- ২ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স।
- বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগে যেমন: কার্ডিওলজি, ডার্মাটোলজি, গাইনোকলজি ইত্যাদি।
২. এমডি/এমএস (MD/MS):
- এমডি (ডক্টর অফ মেডিসিন) বা এমএস (মাস্টার অফ সার্জারি) হলো তিন বছর মেয়াদী কোর্স।
- বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগ যেমন: মেডিসিন, সার্জারি, গাইনোকলজি, পেডিয়াট্রিক্স, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি ইত্যাদি।
৩. এমফিল (MPhil):
- গবেষণামূলক মাস্টার্স প্রোগ্রাম।
- সাধারণত বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে করা হয়।
৪. এমপিএইচ (MPH):
- মাস্টার অফ পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম।
- যারা পাবলিক হেলথ বা স্বাস্থ্য প্রশাসনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য উপযুক্ত।
৫. এফসিপিএস (FCPS):
- কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস, বাংলাদেশ (BCPS) কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ।
- বিভিন্ন বিভাগে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করা যায় যেমন: সার্জারি, মেডিসিন, গাইনোকলজি ইত্যাদি।
৬. পিএইচডি (PhD):
- যারা মেডিকেল রিসার্চ বা একাডেমিক ফিল্ডে ক্যারিয়ার গড়তে চান তারা পিএইচডি করতে পারেন।
- এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণামূলক প্রোগ্রাম।
৭. ফেলোশিপ প্রোগ্রাম (Fellowship Programs):
- সাধারণত ১-২ বছরের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম।
- দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া যায়।
৮. এমএসসি (MSc) in Medical Sciences:
- মেডিকেল সায়েন্সের বিভিন্ন শাখায় মাস্টার্স করার সুযোগ যেমন: ইমিউনোলজি, নিউরোসায়েন্স, এপিডেমিওলজি, বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি।
- এই ডিগ্রি গবেষণা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত।
৯. ডিএম (DM) / এমসিএইচ (MCh):
- ডিএম (ডক্টরেট অফ মেডিসিন) এবং এমসিএইচ (মাস্টার অফ চিরুর্জি) হল বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি যা এমডি বা এমএস সম্পন্ন করার পর করা হয়।
- বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপার-স্পেশালাইজেশন, যেমন: কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নিউরোসার্জারি ইত্যাদি।
১০. ইন্টার্নশিপ এবং রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম:
- বাংলাদেশে বা বিদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ বা রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
- রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
১১. ডিপ্লোমেট অফ ন্যাশনাল বোর্ড (DNB):
- ভারতের মেডিকেল কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত একটি বিশেষজ্ঞ কোর্স যা এমডি বা এমএস-এর সমতুল্য।
- বিভিন্ন বিভাগে ডিএনবি করা যায় যেমন: কার্ডিওলজি, গাইনোকলজি, অ্যানেস্থেসিয়া ইত্যাদি।
১২. ডিস্ট্যান্স এডুকেশন এবং অনলাইন কোর্স:
- যাদের কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়, তারা ডিস্ট্যান্স এডুকেশন বা অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা, বা মাস্টার্স ডিগ্রি অনলাইনে অর্জন করা সম্ভব।
১৩. বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা:
- অনেক ডাক্তার উচ্চতর শিক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে পছন্দ করেন।
- ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য বিশেষ স্কলারশিপ এবং ফেলোশিপ পাওয়া যায়।
- USMLE, PLAB, AMC, MCCQE, NZREX ইত্যাদি পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা অনুশীলনের লাইসেন্স লাভ করা যায়।
১৪. মেডিকেল এডুকেশন এবং প্রশিক্ষণ:
- যারা একাডেমিক ক্যারিয়ারে আগ্রহী, তারা মেডিকেল এডুকেশনে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে পারেন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারেন।
- মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বা শিক্ষক হিসেবে কাজ করা সম্ভব।
১৫. হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন:
- যারা মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট এবং প্রশাসনে আগ্রহী, তারা এমবিএ ইন হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট বা হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করতে পারেন।
- স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবস্থাপনা, নীতি নির্ধারণ, এবং নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারেন।
১৬. ক্লিনিক্যাল রিসার্চ:
- যারা গবেষণার দিকে যেতে চান, তারা ক্লিনিক্যাল রিসার্চের দিকে আগ্রহী হতে পারেন।
- ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট (CRA) হিসেবে কাজ করা বা পিএইচডি করে গবেষণা ক্ষেত্রে অবদান রাখা সম্ভব।
এইসব বিকল্পগুলোর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক তার ক্যারিয়ারকে আরও উন্নত করতে পারেন এবং স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ হতে পারেন।
এছাড়া, যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চান, তারা ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইন্ডিয়া ইত্যাদি দেশে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স বা ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারেন।