অত্যাধিক গরমে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে ?

অত্যাধিক গরমে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও অভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি। চলুন বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে দেখি—


১. শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা (পানি ও তরল গ্রহণ)

গরমের সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।

কি করবেন?

  • প্রতিদিন ২.৫-৩.৫ লিটার পানি পান করুন।
  • ঠাণ্ডা কিন্তু অতিরিক্ত বরফযুক্ত নয় এমন পানি পান করুন।
  • ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় (যেমন ওআরএস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তাজা ফলের রস) গ্রহণ করুন।
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেট করে।



২. সঠিক পোশাক ও সুরক্ষা

উপযুক্ত পোশাক ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা আপনাকে গরমের কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারে।

কি করবেন?

  • হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরুন যা সহজে বাতাস চলাচল করতে দেয়।
  • সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরুন, কারণ গাঢ় রঙের পোশাক বেশি তাপ শোষণ করে।
  • বাইরে গেলে ছাতা, ক্যাপ বা হ্যাট ব্যবহার করুন।
  • চোখ রক্ষার জন্য সানগ্লাস পরুন।
  • সানস্ক্রিন (SPF ৩০ বা তার বেশি) ব্যবহার করুন, বিশেষ করে রোদে বের হলে।

৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

সঠিক খাদ্যাভ্যাস শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে এবং হিটস্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।

কি খাবেন?

  • পানি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন তরমুজ, শসা, পেপে, স্ট্রবেরি, কমলা, আনারস, লাউ, দই) বেশি খান।
  • হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান যেমন স্যুপ, ফলের সালাদ, সবজি দিয়ে তৈরি খাবার।
  • বেশি লবণ ও চিনি দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • একবারে বেশি না খেয়ে বারবার অল্প করে খান।
  • তেলেভাজা ও গুরুপাক খাবার কম খান, কারণ এগুলো শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

৪. ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

কি করবেন?

  • জানালা ও দরজা খোলা রেখে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন।
  • পর্দা, ব্লাইন্ড বা সানশেড ব্যবহার করে ঘর ঠাণ্ডা রাখুন।
  • সম্ভব হলে ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার বা কুলার ব্যবহার করুন।
  • রাতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন বা পা ধুয়ে ঘুমান।

৫. রোদ এড়িয়ে চলা ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা

কি করবেন?

  • সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সরাসরি রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন ও গরমে বেশি হাঁটাহাঁটি না করার চেষ্টা করুন।
  • ছায়াযুক্ত বা শীতল স্থানে বেশি সময় কাটান।

৬. অতিরিক্ত গরমে শারীরিক সতর্কতা ও হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ

অত্যাধিক গরমে হিটস্ট্রোক, হিট এক্সহশন (গরমজনিত দুর্বলতা), ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ:

  • মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
  • অতিরিক্ত ঘাম বা হঠাৎ ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • শুষ্ক মুখ, তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া
  • প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া
  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

কি করবেন?

  • ছায়াযুক্ত বা শীতল স্থানে যান।
  • ঠাণ্ডা পানি পান করুন ও শরীরকে ভেজা কাপড় দিয়ে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করুন।
  • গরমে বেশি কসরত করবেন না, প্রয়োজনে বিশ্রাম নিন।
  • গুরুতর অবস্থা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে প্রচণ্ড গরমেও সুস্থ থাকা সহজ হবে!